বিয়ের গয়না

বিয়ের গয়না

যতই সাজুন আর শাড়ি পরুন, গয়না ছাড়া কি বউ সাজ পূর্ণ হয়? এক সময় বিয়ের গয়না মানেই ছিল গা ভর্তি ভারী স্বর্ণালংকার। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে গয়নার ফ্যাশন ট্রেন্ডেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। তাই ঐতিহ্যবাহী ভারী গয়নার বদলে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন হালকা নকশার ট্রেন্ডী গয়না। বিয়ের গয়না শুধু সাজগোজের উপকরণ নয়। এটা মায়ের বাড়ির আশীর্বাদ বা শ্বশুড়বাড়ির উপহার।
আগে বিয়ের গয়না মানেই ছিল সোনার গয়না। সোনার আকাশ ছোঁয়া দাম আর ফ্যাশন পরিবর্তনের কারণে বিয়ের গয়নায় জায়গা করে নিয়েছে রূপা, গোল্ড প্লেটেড গয়না, পাথরের গয়না, মুক্তো এমকি হীরাও। তবে সোনার গয়নার আবেদন কমেনি এতটুকুও। এখনও বাঙালি বধু মানেই সোনার গয়নায় মোড়া। তবে আগের মত শুধু হলুদ আর সাদা সোনার গয়নার বাইরে এখন গোলাপি সোনা বা রোজ গোল্ড বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
সোনার গয়নাঃ
পেটানো খাঁটি গিনি সোনার বদলে এসেছে কিছুটা হালকা ডিজাইনের সোনার সাথে পাথর, পুঁতি, কুন্দন বা মুক্তার মিশেলে তৈরি গয়না। আপনার বিয়ের শাড়ির কালারের সাথে মিলিয়ে স্টোন বা পুঁতি বসিয়ে নিতে পারেন। এখনকার ট্রেন্ড সেটাই। এছাড়াও পোশাকের সাথে মিলিয়ে গোল্ডের গয়নায় মিনা করিয়ে নিতে পারেন। ব্যবহার করতে পারেন রুবি, পান্না, টোপাজের মত দামি পাথর। রোজ গোল্ডের সাথে মুক্তা সুন্দর মানাবে। আপনার মায়ের বা দাদীর ট্রেডিশনাল গয়না গুলোকে পাথর, পুঁতি বসিয়ে বানিয়ে ফেলুন হাল ফ্যাশনের। সোনার গয়না কিনতে পারেন বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, রাইফেল স্কয়ার বা গুলশান পিংক সিটি থেকে। রেডিমেড কিনতে পারেন বা নিজের পছন্দ অনুযায়ী বানিয়ে নিন। তবে হাতে সময় থাকা চাই ২ সপ্তাহ থেকে একমাস। ১৮ ক্যারেটের সোনার ভরি-৪০ হাজার ৫০০ টাকা, ২১ ক্যারেট-৪৭ হাজার টাকা, ২২ ক্যারেট ভরি প্রতি-৫০ হাজার টাকা।
হীরার গয়নাঃ
সোনা যেমন ঐতিহ্য, হীরা তেমনি আভিজাত্যের প্রতীক। আগে শুধু উচ্চবিত্তের নাগালে থাকলেও এখন মধ্যবিত্তের হাতের সীমানায় চলে এসেছে হীরা। পুরো সেট না হোক দুই একটা হীরার গয়না তো থাকা চাইই চাই। আমাদের দেশে দুই ধরনের হীরা পাওয়া যায়, বোম্বে কাট আর বেলজিয়াম কাট। বোম্বে কাট দামে সস্তা হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। হীরার গয়না পাবেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, ডায়ামন্ড গ্যালারী, ডায়াগোল্ড, অলংকার নিকেতন, নিউ জরোয়া হাউস এই দোকান গুলোতে। হীরের নাকফুল ২৫০০-১৫০০০ টাকা, কানের দুল ২০০০০-৫০০০০টাকা, আংটি ২০০০০-৪০০০০ টাকা, নেকলেস ৩০০০০- ১লাখ টাকা। দেড়-আড়াই লাখ টাকায় পাবেন হালকা ডিজাইনের সেট। বেলজিয়াম কাটের ক্ষেত্রে সেটের দাম পড়বে ৩-৫ লক্ষ টাকা। হীরের গয়না বেশি মানাবে শিফন বা জর্জেটের হালকা কাজের আধুনিক শাড়ি বা লেহেঙ্গার সাথে। এনগেজমেন্ট বা বউভাতে হীরের গয়না বেশি মানানসই।
রুপোর গয়নাঃ
বিয়েতে প্রচলিত রুপার গয়নার চল না থাকলেও রুপোর উপর গোল্ড প্লেটেড করে নিতে পারেন। বিশেষ করে কিছু গয়না যা পরে আর তেমন পরা হবে না সেগুলো রুপো দিয়ে বানাতে পারেন। যেমন নথ, টিকলি, টায়রা, ঝাপ্টা বা নূপুর। অনেকেই আজকাল হলুদে ফুলের গয়নার পাশাপাশি বা পরিবর্তে ব্যবহার করছেন রুপোর গয়না। রুপার ভরি বর্তমানে ১২০০-১৪০০ টাকা। রূপার গয়নার রিসেল ভ্যালূ আছে। বিয়ের পরে যেসব গয়না পরা হয় না সেগুলো বিক্রি করতে পারেন বা বানিয়ে নিতে পারেন অন্য কিছু।
গোল্ড প্লেটেডঃ
গোল্ড প্লেটেড গয়নার জনপ্রিয়তা বাড়ছে ক্রমশই। স্বর্ণের উর্ধগতির কারণে অনেকেই ঝুঁকছেন গোল্ড প্লেটেড গয়নার দিকে। বিয়ের সব গয়নার বানাতে পারেন সিটি গোল্ড / ইমিটেসন বা গোল্ড প্লেটেড ম্যাটেরিয়াল দিয়ে। কপার বা অ্যান্টিক কালারের গোল্ড প্লেটেড গয়না এখন বেশ চলছে। পাথর, পুঁতি, মুক্তা মানাবে এক সাথে। সেটের দাম পড়বে ১২০০০-৩০০০০টাকা। এসব গয়না পাবেন গাউসিয়া, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটিতে।
কোন শাড়িতে কোন গয়নাঃ
কাতান, বেনারসি, জামদানি, মসলিন এসব দেশি শাড়ির সাথে ট্রেডিশনাল সোনার গয়না বেশি মানাবে। সিফন, জর্জেট, নেট শাড়ির সাথে ভালো মানাবে পাথর, পুঁতি বা হীরার গয়না। গয়নায় জমকালো ভারী কাজ থাকলে কিছুটা হালকা কাজের শাড়ি বেছে নিন। এতে গয়নার সৌন্দর্য বেশি ফুটে উঠবে।
কী কী গয়না চাইঃ
গয়না এমন হওয়া চাই যা বিয়ের পর শুধু সিন্দুকে বন্দী হয়ে থাকবে না। তাই এখন সিতা হার, মুকুট, তাজের দেখা পাওয়া যায় কম। একটি সিতা হারের বদলে আলাদাভাবে ২-৩ টি হার পরতে পারেন। মাথায় পরতে পারেন টিকলির পাশাপাশি টায়রা। এখন এক লহর ছাড়াও ২-৫ লহরের টায়রাও পরছেন অনেকে পুরো মাথা জুড়ে। একপাশে ব্যাংস কাট রাখলে অন্য পাশে পরতে পারেন ঝাপ্টা। মুখ জুড়ে বড় নথের পাশাপাশি চলছে ছোট নথও। কানের ঝুমকা বা কানপাশার সাথে অনেকেই পরছেন টানা। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ ওড়না পড়ুন। হাতে সোনার বালা বা চুড়ের সাথে শাড়ির রঙ মিলিয়ে পড়ুন গোল্ড প্লেটেড স্টোন, পুঁতি আর ঝালর লাগানো চুড়ি। বাজুতে অনেকেই পরছেন বাজুবন্ধ। চাইলে কোমড়ে পড়তে পারেন বিছা। বিশেষ করে হলুদে কোমড়ে রূপোর বিছে বেশ ভালো লাগবে। আজকাল পায়ে ভারী নকশার নূপুর চলছে বেশ। বেনী বা খোঁপায় জড়িয়ে নিতে পারেন রূপো বা গোল্ড প্লেটেড মালা।

গায়ে হলুদের কেনাকাটা

গায়ে হলুদের কেনাকাটা

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় কনে-বর কে হলুদ লাগিয়ে। গায়ে হলুদের বিয়ের দিন এর মত ঝক্কি-ঝামেলা না থাকলেও, ছোট ছোট অনেক দিক দেখতে হয়। যেমন – বর-কনের ডালা সাজানো, ফুলের গয়না তৈরি, অতিথিদের জন্য উপহার কেনা, হলুদের স্টেজ সাজানো ইত্যাদি। যদিও হলুদের এসব কাজ নিজেরাই করতে অনেক মজা, তাও আজকাল অনেকেই সময়ের অভাবে অথবা না জানার কারণে এসব দায়িত্ব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর হাতে তুলে দিয়ে নির্ভার থাকছে। আর গুনতে হচ্ছে মোটা টাকার অঙ্ক। কিন্তু আমরা আমাদের চির চেনা শাহবাগ, গাউসিয়া , নিউ মার্কেট থেকেই করে নিতে পারি গায়ে হলুদের বেশির ভাগ কেনাকাটা।
বর-কনের সাজপোশাকঃ
নিত্য নতুন ফ্যাশনের ভিড়ে বর কনেরাও এক্সপেরিমেন্ট করতে ভুলে না। এখন আর সেই দিন নেই যে গায়ে হলুদে কনে রা পরবে হলুদ শাড়ি আর বর পরবে সাদা পাঞ্জাবি। পরিবর্তনের হাওয়ায় এখন কনেরা লাল, সবুজ, খয়েরি থেকে শুরু করে সাদা শাড়িও পরে। আসল ফুলের গহনার পরিবর্তে এসেছে কাগজের অথবা প্লাস্টিক এর ফুলের গহনা।
সাধারাণত গায়ে হলুদে কনে রা টাঙ্গাইল এর সুতি শাড়ি, হাফ সিল্ক, সিল্ক কাতান, জামদানি শাড়ি বেশি পছন্দ করে। হালকা কাজের শাড়ি গায়ে হলুদের জন্য বেশি মানানসই। শাড়ি ভেদে এবং গুণগত মান অনুযায়ী হলুদের শাড়ির দাম পড়বে ২৫০০-১২০০ এর ভিতরে। কনের হলুদের শাড়ি কেনার নির্ভর যোগ্য জায়গা হিসাবে আছে –
১। বেইলি রোড এর টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির
২। মিরপুর বেনারশি পল্লি
৩। বসুন্ধরা সিটি ( লেভেল ৩, ৪)
তাছাড়া রয়েছে মেয়েদের চিরচেনা পছন্দের জায়গা নিউ মার্কেট, গাউসিয়া ইত্যাদি। এসব জায়গায় বাজেটের মধ্যে সুন্দর শাড়ি পাবেন।
গায়ে হলুদে বর দের পাঞ্জাবি টি সাধারণত সুতি , সিল্ক অথবা হাফ সিল্ক এর হয়ে থাকে। বর দের পোশাকের জন্য সব চেয়ে পছন্দ সই জায়গা হল এলিফেন্ট রোড। সেখানে বিভিন্নও দোকান আছে। চাইলেই পছন্দ মত ডিজাইনে বানিয়ে অথবা কিনে নিতে পারেন সাশ্রয়ী দামে। এলিফেন্ট রোড এর অনেক বিখ্যাত দোকান হল সানাই, তার অনেক সুনামের সহিত বহু বছর ধরে বর দের বিয়ের সুট বিশ্বস্ততার সাথে বানিয়ে আসছে।
তাছাড়া লুবনান, ভাসাবি, শপারস ওয়ার্ল্ড, জারা তে অনেক ভালো মানের পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। হলুদের পাঞ্জাবি জায়গাভেদে দাম হবে ৩০০০-১০০০০ এর ভেতরে।
গায়ে হলুদে কনের গহনাঃ
এখন আর সেদিন নেই যে কনেরা গাঁদা ফুল দিয়ে গহনা বানিয়ে পরবে। আসল ফুল কে ছাড়িয়ে আজকাল রকমারি ডিজাইন এর কৃতিম ফুলের গহনা দেখা যায় কনে দের পরতে। এদিক থেকে এসব তৈরি তে ফেসবুক এর কিছু অনলাইন পেজ আছে অনেক এগিয়ে। তারা কাস্টমার দের পছন্দ অনুযায়ী অথবা স্যাম্পল দেখিয়ে সুন্দর গহনা তৈরি করে দেয়। তাদের মধ্যে ওয়েডিং ডেকোর বাই নুসরাত অনেক জনপ্রিয়ও। তাছাড়া শাহবাগ, গাউসিয়া, এলিফেন্ট রোডের ফুলের দোকান এবং ডালার দোকানে স্যাম্পল অনুযায়ী অর্ডার দেওয়া যায়। গুলশান ২ এর ওয়েস্টিন এর পাশে কতো গুলো ফুলের দোকান আছে, তাদের হলুদের গহনা অনেক সুন্দর হয়।
গায়ে হলুদের ডালাঃ
সাধারণত গায়ে হলুদে ১০/১২ টা ডালা হয়ে থাকে।
#৩ টা ডালায় বর অথবা কনের গায়ে হলুদের জামা কাপড়, জুতা।
#একটি ডালায় গায়ে হলুদের সরঞ্জাম রাখি, বিয়ের গহনা, গায়ে হলুদের আনুসঙ্গিক জিনিস ।
#একটি তে হলুদ, মেহেদি, উপ্টান, প্রদীপ থাকে।
#একটি তে পান, সুপারি, জরদা থাকে।
# একটি তে গায়ে হলুদের সব কস্মেটিক্স।
# দুটি ডালা তে সব মিষ্টি।
# একটি তে ফল কারভিং করে রাখা ডালা।
নিজের ইচ্ছা এবং সামঞ্জস্য অনুযায়ী ডালা আরও কয়েকটি বারাতে পারেন। চাইলে ডালা গুলো কে ওয়েডিং মেনেজমেন্ট করে এমন কোন কোম্পানি, অথবা এলিফেন্ট রোড থেকে সাজিয়ে আনতে পারেন। মিষ্টি ডালার পরিবর্তে হাড়ি তে করে নিয়ে যেতে পারেন। নিজের সাধ্য এবং ক্রিয়েটিভ মন দিয়ে ডালা গুলো কে সুন্দর করে সাজাতে পারেন। ফেসবুকে কিছু ওয়েডিং ইভেন্ট মেনেজমেন্ট করে পেজ থেকে ডালা তৈরির আইডিয়া নিতে পারেন।
গায়ে হলুদের স্টেজঃ
গায়ে হলুদের স্টেযে হলুদ ফুল যেমন গাঁদা ফুল, হলুদ কারনেসন ইত্যাদির ব্যবহার এখনও আছে। রঙ্গিন ফুলের ব্যবহার বেশি থাকে। গায়ে হলুদের স্টেজ সাধারণত সারটিং কাপর, নেট, ফুল ইত্যাদি দ্বারা করা হয়। স্টেজ ভেদে এসব করতে গুনতে হবে ১৫০০০-৮০০০০।
অতিথিদের উপহারঃ
অনেক আগে থেকে গায়ে হলুদে অতিথিদের ছোট খাটো জিনিস দিয়ে বরন করার নিয়ম রয়েছে। সেটা হতে পারে টিপ, চিরুনি, কাঁচের চুড়ি, কানের দুল , ফুল ইত্যাদি। বিয়ে বাড়ির মানুষ রা উপহার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, অতিথিদের উপহার এবং ফুল দিয়ে বরন করার জন্য। তাছাড়া ম্যাচিং করে অতিথিদের শাড়ি এবং জামা দেওয়ার রেওয়াজও চালু হয়েছে। তাই মেহমান দের উপহার দেওয়ার আগে বাজেট করে নিন, প্রতি সদস্যর জন্য কেমন খরচ পড়বে। তাহলেই সামর্থ্যের সাথে চাহিদার যোগান মিলবে। এসব উপহার কম দামে গাউসিয়া এবং নিউ মার্কেটে পাবেন।
গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম করার উপযোগী কিছু সেন্টারঃ
১। রাওয়া ক্লাব
ঠিকানাঃ ডি ও আচ এস, মহাখালি, মহাখালি ফ্লাইওভার এর পাশে।
২। লেডিস ক্লাব
ঠিকানাঃ পরিবাগ, নেভি হাউস এর পাশে
৩। জিঞ্জিয়ান রেস্টুরেন্ট
ঠিকানাঃ ধানমন্ডি ২৭
৪। পাম ভিউ রেস্টুরেন্ট
ঠিকানাঃ আর্মি গলফ ক্লাব
যেকোনো অনুষ্ঠানের আগে দরকার সুন্দর পরিকল্পনা। আর এটি ত বিয়ে, জীবনের সব চেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত। তাই আগেই লিস্ট করে নিন, সব কিছু। সবাই কে কাজ ভাগ করে দিন, যাতে করে কোন কাজে ব্যাঘাত না ঘটে। আশা করি পোস্ট টি ভালো লাগবে। ভালো থাকুন সবাই।

ফটোগ্রাফারদের যা করা উচিত

ফটোগ্রাফী নিয়ে সব সময় অন্য ফটোগ্রাফাররা একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হন তা হল, আমি কি করব? এবং এই ফটোগ্রাফাররা সব সময় টিপস দিতেই থাকেন কি করতে হবে কি করতে হবে। কিন্তু আমরা অনেক সময়ই চিন্তা করি না যে কি কি করা উচিত না। এখানে যেই টিপস গুলি দেওয়া আছে, তার কোনটাই না করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। আর এটা বেশী কাজে লাগবে নতুন ফটোগ্রাফারদের জন্য।

১. চাই আরও আরও লেন্স, ট্রাইপড, ফ্লাস ইত্যাদি ইত্যাদি:

বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণা থাকে যে যত বেশি গিয়ার, তত বেশী ভাল ছবি। আর নতুনদের তো আফসোসের শেষ নাই। প্রথমে একটা ক্যামেরা হাতে পাইলে চাই ডিএসএলআর, সেটা পাইলে চাই এত্তোগুলান লেন্স, তারপর চাই ফ্লাস, ট্রাইপড ইত্যাদি ইত্যাদি। ধীরে ভাই ধীরে। যা হাতে আছে তাই দিয়ে কাজ শিখুন, আস্তে আস্তে আগান। কাজ যত শিখবেন, ততই নিজে নিজে বুঝতে পারবেন যে আপনার কি দরকার। সত্য কথা বলতে ১বছর আগে আমারও এমন মনে হত। কিন্তু আমার হাতে এখন যা আছে, আমি তাই নিয়েই সন্তুষ্ট। আর তা দিয়ে যে খারাপ কিছু করছি এমন না। বরং আমি উল্টা বলি যে আমি আমার ক্যামেরার যোগ্য এখনও হইনি।

২. ক্যামেরা বাড়ি রেখে যাওয়া:

আলসেমি করে ঘরে ক্যামেরা রেখে বের হবেন, দেখবেন আপনার মাথার উপরে আকাশটা আজকে কত্তো সুন্দর দেখাচ্ছে। হয়ত এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে, যা আপনার হাতে ক্যামেরা থাকলে তুলে রাখতে পারতেন। কিন্তু আফসোস, আপনিতো আলসেমি করে ক্যামেরা ঘরে রেখে গেছেন। অথবা হয়ত ছিনতাইকারির ভয়েই ক্যামেরা রেখে গেছেন। কি আর করা, মিসতো মিসই। তাই না? তাই ক্যামেরা কখনই ঘরে ফেলে রেখে যাবেন না। সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. একই টেকনিকে সব ছবি তোলা:

নতুনদের ক্ষেত্রে এই জিনিষটা একটা কমন বিষয়। একবার যদি একটা জিনিষ ভাল পাওয়া যায়, তাইলেই হইছে, ঐভাবেই ছবি তুলতে থাকবে। অনেকই হয়ত মনে মনে আমার ভুল একটা ধরে ফেলছেন, মনে করছেন যে আসলে এমন হয় না। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। চাঁদের ছবি দেখেছেন? দেখবেন সব্বাই একই রকম ছবি তুলে ভরে ফেলেছে। নতুনত্ব নেই কোন। সবার একই ছবি। বলতে বাধে না, আমিও অমন করেই তুলেছিলাম, মাত্র একবার। একবার তুলে যখনই ফেসবুকে আপলোড দিলাম, ওমনি ৩০ মিনিটের মধ্যে ঐ একই রকম ছবিতে ফেসবুক একাকার। তাই, একই স্টাইলের ছবি বার বার না। নতুন টেকনিক বের করুন।

৪. কপিরাইটের মূল্য না দেওয়া:

অনেককেই দেখি যে কপিরাইটের মূল্যই দেয় না। কিছু বললেই বলে, আরে কপি করুকতো, কার কি আসে যায়। কিন্তু না, এমনে যদি সব্বাই আপনার ছবি কপি করে, তাহলে আর আপনি কষ্ট করে ছবি তুলছেন কেন? আর ভবিষ্যতেই বা আপনি কি করবেন? তাই নিজের কপিরাইটের মূল্য দিন। মূল ছবি আপলোড করা থেকে বিরত থাকুন। বরং মূল ছবির একটা রেপ্লিকা (ছোট সাইজের ছবি) আপলোড করুন।

৫. অতিরিক্তমাত্রায় কপিরাইট কপিরাইট করা:

আগের পয়েন্টের থেকে এটা একটু সেল্ফ-কন্ট্রাডিক্টরি মনে হতে পারে। অনেক সময়ই দেখা যায় ফটোগ্রাফাররা তাদের ছবি এখানে ওখানে দিয়ে নিজের কপিরাইটের জন্য এত্তোগুলা কথা লিখেন। এটা করা উচিত না। তাতে মানুষ বিরক্ত হয়। আপনি ছোট সাইটের ছবি দিলেই অথবা লোগো বসিয়ে দিলেই এই সমস্যার সমাধান। আবার আপনি যদি মনে করেন যে আপনার ছবিটি চুরি হতে পারে, তাহলে সেটি কোথাও প্রকাশ করাই উচিত নয়, শুধুমাত্র যেখানে দরকার, সেখানে প্রকাশ করুন।


৬. সব কাজ হাতে নেওয়া:

অনেকেই আছেন, যারা কোন একটা বিষয়ে কিছু না জেনেই কাজ হাতে নিয়ে ফেলেন। আপনার হাতে কাজ এসেছে, আর তাই করতে হবে এমনটা মনে করবেন না। এতে করে হিতে বিপরিত হতে পারে। কাজ একবার লেজে-গোবরে হয়ে গেলে ঐ ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কোন দিন কাজ পাবেন না, এটা মাথায় রাখতে হবে। তাই আগে কাজ শিখুন, পরে কাজ করুন। কাজ আসলেই হাতে নিবেন না। কিছু টাকার থেকে রেপুটেশন অনেক বড় বিষয়।

৭. সব কিছু নিজে করা:


আপনি পারেন বলেই সব নিজেকেই করতে হবে এমন না। দরকার পড়লে সঠিক কাজের জন্য সঠিক লোক সাথে নিন। আপনি হয়ত একহাত দিয়ে ক্যামেরা আর এক হাতে রিফ্লেক্টর ধরে রাখতে চাইবেন, এটা কখনও কখনও সম্ভব হলেও তা করা উচিত না। আর সাথে এক-দুজন এসিস্টেন্ট নেওয়া বেশ ভাবেরই বিষয়। লাভ কম হোক, এতে করে আপনার রেপুটেশন একটু হলেও বাড়বে। বুঝতেই পারছেন যে এটা একটু যারা ফটোগ্রাফিতে নাম কামিয়ে কাজ পাচ্ছেন, এমন লোকদের জন্য টিপস।


৮. নিজের জায়গা তৈরী না করা:

অনেকেই আলসেমি করে নিজের জায়গা তৈরী করতে পারে না। হয় সে মানুষের সাথে কথা বলে না, নিজের কাজ শেয়ার করেনা, অথবা হয়ত অন্যের কাজ দেখে না। কোন না কোন ভাবে আপনার জায়গা আপনাকেই তৈরী করে নিতে হবে। না হলে আপনি একসময় আর পাত্তা পাবেন না। অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করতেই হবে।

৯. হিসাব, হিসাব, হিসাব:

আপনার খরচ যদি অতিরিক্ত হয়, তাহলে সেটা কমাতে হবে। অল্প অল্প করে আগান। একগাদা খরচ করে বসে থাকার কোন মানে হয় না। ক্যামেরার ইকুয়িপমেন্টে জং না পড়লেও ফাঙ্গাস পড়ে, তাই কিনে বসিয়ে রেখে কোন লাভ নেই।


১০. আগে থাকতে সামনের প্লান না করা:

বেশির ভাগ ফটোগ্রাফারের আগে বাড়তে না পারার বড় কারণ হচ্ছে তাদের আগে থেকে কোন প্লান থাকে না। এখন থেকে ৬মাস, ১বছর, ৫বছর, ১০বছর পর কি হতে চায়, কি করতে চায় তা জানে না। সবাই স্বপ্ন দেখে বসে থাকে যে বড় ফটোগ্রাফার হবে, কিন্ত কত বড় সেই প্রশ্ন নিজেকেই করে না। তাই আগে থাকতে প্লান করুন, সেই প্লান অনুযায়ী কতদূর আগালেন তা যাচাই করুন, সেই অনুযায়ী চলুন।

১১. ব্লগিং  এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা:

অনেকেই আছেন যে মাত্র ১/২টা গ্রুপে ছবি শেয়ার করেই বসে থাকেন। বা শুধুমাত্র ফ্লিকারে ছবি আপলোড করে বসে থাকেন। এমনটা করা উচিত না। উচিত হল যত যায়গায় পারা তত যায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া। যতগুলো ব্লগ, ছবি শেয়ারিং সাইট, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি, সব খানে ছবি আপলোড করুন। মনে রাখবেন, হয়ত এমন একটি সাইটে ছবি আপলোড করলেন যেখানে বছরে ১জন ঢুকে, এমন যায়গায়ও শেয়ার করা উচিত। কারণ হয়ত ঐ ১জনই আপনার ছবিটি কিনতে পারে, বা আপনার ছবি দেখে আপনাকে কাজ দিতে পারে। আর তা না করলেও ঐ ১জনতো আপনার নাম জানল, তাই না?


১২. নিজের ওয়েব সাইট:

অনেকেই মনে করেন যে নিজের ওয়েব সাইট থাকার দরকার নাই, আমি এতো বড় ফটোগ্রাফার হই নাই, আমি এত খরচ বহন করতে পারব না। কিন্তু নিজের ওয়েব সাইট থাকা গুরুত্ব পূর্ণ। ধরেন সবাই ফ্লিকারে বসে বসে আপনার সব ছবি এক সাথে দেখবে এমন নাও হতে পারে, আবার ফেসবুকে যার একাউন্ট নেই (এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম না) তারা কি করে আপনার ছবি দেখবে? তাই উচিত নিজের একটা ওয়েব সাইট থাকা। এটা আসলেই বড় কোন বিষয় না, কারণ এখানে আপনি ইচ্ছামত ছবি আপলোড, নিজের প্যাকেজ সমূহের বর্ণনা, নিজের পোর্টফলিও দেখান ইত্যাদি ইত্যাদি করতে পারবেন। তাই, এখনই একটা ওয়েব সাইট বানিয়ে নিন।

১৩. ট্রাইপড ভুলে যাওয়া:

এই জিনিষ এত বেশিই হয় যে এই গুরুত্বপূর্ণ লিষ্টে না ঢুকিয়ে পারলাম না। কম আলো, সন্ধা, রাত, ভোর এইসবের ক্ষেত্রে যেমন ট্রাইপড জরুরী, তেমনিই অন্য সব ক্ষেত্রেও ট্রাইপড জরুরী। এমনও হতে পারে যে এক জায়গায় গিয়ে আপনার প্যানারোমা শট নিতে ইচ্ছা হল, কিন্তু ট্রাইপডের অভাবে নিতে পারলেন না। তাই, কখনই ট্রাইপড ভুলে যাওয়া উচিত না, বা সাথে না নিয়ে ফটোগ্রাফী করতে যাওয়া উচিত না।

১৪. সব কিছু ফটোশপে ঠিক করে নিতে পারবেন এমন ভাবা:

এটা খুবই কমন যে একটা ছবি তুলেই চিন্তা করা যে এটা ফটোশপে ঠিক করে নিব। মনে রাখবেন, চিন্তা করার সময় সহজ মনে হলেও বেশীর ভাগ সময়ই ফটোশপে সব ঠিক করা এতটা সহজ না। তাই, ছবিটি ভাল করে আবার তুলুন, ফটোশপকে একটু ভুলে থাকলে উপকারই হবে, ক্ষতির সম্ভাবনা কমই আছে। এর একটা উদাহরণ নিচে দেখুন।


১৫. ফটোশপ বা ছবি এডিটিং সফ্টওয়্যারে স্কিল না বাড়ান:

ফটোগ্রাফী করতে গেলে কিছু হলেও কারেকশন আপনাকে করতেই হবে। আগের ফটোগ্রাফাররা করতেন ডার্ক রুমে, এখন আমরা করি ফটোশপ বা লাইটরুমে। তাই এই বিষয়ে কিছু বেসিক স্কিল আপনাকে বাড়াতেই হবে। না হলে মাঠে মারা যেতে পারেন।

১৬. শেখা বন্ধ করা:

এটা বেশ হাস্যকর হয়ে যাবে, কারণ বর্তমান সময়ের ফটোগ্রাফারদের একটা বড় সমস্যা হল তারা শিখতেই চায় না, আর শেখা বন্ধ করা। তবে এই মুহূর্তে আপনি যদি এই লেখা পড়তে থাকেন, তার অর্থ দাড়ায় আপনি শেখা বন্ধ করেন নি বা শিখছেন। তাই অনুরোধ, শেখা বন্ধ করবেন না। হয়ত একই জিনিষ বার বার শেখার ফলে আপনি নতুন কিছু পেতে পারেন, আর যা শিখেন নি, তা শিখে ফেলতে পারেন।



১৭. নতুন নতুন লেন্স ব্যবহার না করে পুরাতনটা নিয়ে পড়ে থাকা:

অনেকেই আছেন একবার একটা লেন্সে অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরে আর ঐ লেন্স থেকে সরতেই চান না। এটা ঠিক না। হয়ত আজকে আপনি ৫০মিমি এর লেন্সে ভাল ফিল করছেন, তার মানে এই নয় যে আপনি কখনই ৩৫মিমি এর লেন্স চেক করবেন না। হয়তো তাতে আরও ভাল কিছু পেতেন। আবার তাই বলে ১নং টিপসের এর মত লেন্স লেন্স করেন না।

আরও অনেক জিনিষই না করার মত আছে, কিন্তু এইগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশাকরি আপনারা ভাল করে ফটোগ্রাফী শিখবেন এবং করবেন। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানের ফটোগ্রাফী করে দেশকে নতুন ভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন।

ক্যামেরা কিংবা লেন্সে সমস্যা হচ্ছে?

ক্যামেরা কিংবা লেন্সে সমস্যা হচ্ছে। সেন্সরে ময়লা পড়েছে ক্লিন করাবেন ভাবছেন । লেন্সে ফাঙ্গাস পড়ে গেছে ক্লিন করাবেন। এসব কাজের জন্যে দক্ষ লোক খুঁজছেন।

যোগাযোগ করতে পারেন: মামুন ইলেক্ট্রনিক (খোকন ভাই), দোকান নং: ৪১৩, নিউ মার্কেট, ১ নাম্বার গেট, আজিমপুর, ঢাকা। ফোন নং - ০১৯১১৩৫৩৪১৪ ।

হক ব্রাদার্স, দোকান: ৪, লেভেন: ৫, ব্লক: বি, বসুন্ধারা সিটি, পান্থপথ, ঢাকা। ফোন নং: ০১৮১২২৮৮৮৫, ০১৭৩১৪৬৩৩৩৪ ।

কোন ক্যামেরা কিনব?

সেন্সর আকার

আলোচনা শুরু করা যাক সেন্সর সাইজ দিয়ে। আলোচ্য ক্যামেরাগুলির মধ্যে সবচাইতে ছোট সেন্সর সাইজ হচ্ছে স্মার্ট ফোনের। সবচাইতে বড় হল ডিএসএলআর এর। সেন্সর সাইজের সাথে ইমেজ গুনের সরাসরি সম্পর্ক আছে। ইমেজ গুন মানে পরিষ্কার ছবি, রঙের গভীরতা, আলোর সামঞ্জস্য, ডাইন্যামিক রেঞ্জ ইত্যাদি। স্বাভাবিক ভাবেই মনে হতে পারে যে ডি এস এল আর এর পাশে স্মার্ট ফোন নস্যি। আসলেই কি তাই? আজকাল নেট জুরে স্মার্ট ফোন দিয়ে তোলা ক্যামেরার যে ইমেজ আমরা দেখি তাতে করে কি এই মতামত আর দেয়া সম্ভব? এরপর দেখুন এখানে বিভিন্ন আকারের সেন্সর সাইজের সমাহার। স্মার্ট ফোন ছাড়া ব্রিজ ক্যামেরার সেন্সর আকার সবচাইতে ছোট। সাধারণ আলোকোজ্জ্বল দিনে এই ক্যামেরাগুলি দিয়ে তোলা ছবির পার্থক্য হয়ত দৃশ্যমান হবেনা, তবে স্বল্প আলোয় এই পার্থক্য স্পষ্ট হতে থাকবে।

মেগাপিক্সেল

মেগাপিক্সেল নিয়ে বেশী আলোচনা না করাই শ্রেয়। আমাদের যাদের দেয়াল সাইজের ছবি প্রিন্ট করার দরকার নেই তাঁদের জন্য স্মার্ট ফোনের যে ৮ মেগাপিক্সেল দেখছি, সেটাই যথেষ্ট।

আই এস ও

আজ থেকে মাত্র কয়েক বছর আগেও আই এস ও নিয়ে কাউকে মাথা ঘামাতে শুনিনি। এখন এই আই এস ও দেখে অনেকে শুনি ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত নেন। ক্ষেত্র বিশেষে এটা অনেকখানি যৌক্তিক হলেও একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে আই এস ও এর সাথে লেন্সের এপারচার মূল্য এবং সেন্সর সাইজের সম্পর্ক আছে। যেমন উদাহরণ হিসেবে আমরা ব্রিজ ক্যামেরা সনি এইচ এক্স ৩০০ কে ধরতে পারি। এই ক্যামেরার সর্বোচ্চ আই এস ও হচ্ছে ১২৮০০। কিন্তু এর সেন্সর সাইজ বেশ ছোট, টিপিকাল লো এন্ড কমপ্যাক্ট ক্যামেরার যেমন হয় আর এর লেন্সের এপারচার দেখুন– ২.৮ থেকে ৬.৩। কাজেই আই এস ও বেশী থাকার পরেও শুধু এপারচারের কারণে স্বল্প আলোয় এই লেন্স দিয়ে তোলা ছবি হোঁচট খাবে বারবার। একই ছবি অন্যান্য ক্যামেরায় হয়ত উৎরে যাবে শুধু এপারচার মূল্য বেশী থাকার কারণে।

এল সি ডি

আধুনিক ক্যামেরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ছবি তুলুন আর মুহূর্তের মধ্যে দেখে নিন কেমন হল, খারাপ উঠলে আবার তুলুন। এখানে বিস্ময়কর হলেও সত্যি, স্মার্ট ফোন এগিয়ে আছে অনেক খানি। শুধু যে উল্লিখিত ফোন ক্যামেরার এল সি ডি ৫ ইঞ্চি তাই নয়, এদের রেজুলিউশনও অনেক বেশী। কাজেই ছবি তুলে তা দেখার মতন আরাম আর অন্য কোনও ক্যামেরায় আপনি পাবেন না। তবে তার মানে এই নয় অন্য ক্যামেরাগুলির এল সি ডি ভাল নয়। সবগুলিই ভাল, শুধু স্মার্ট ফোনের চাইতে খানিক পিছিয়ে আছে। রেজুলিউশন হয়ত বাড়ানো সম্ভব যুগের সাথে তাল মিলিয়ে, তবে এইসব ক্যামেরায় ৩ ইঞ্চির জায়গায় ৫ ইঞ্চি আকার বাড়িয়ে দেয়াটা কঠিনই হবে। কমপ্যাক্ট ক্যামেরা তার ছোট আকারের ফর্ম ফ্যাক্টরের জন্যই কিন্তু সমাদৃত, শুধু এল সি ডির কারণে ক্যামেরার ভৌত কাঠামোর আকার বাড়ানোটা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।

ভিউ ফাইন্ডার

এখানে যে ক্যামেরাগুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে একমাত্র ডি এস এল আর এবং ব্রিজ ক্যামেরা ছাড়া আর কোনও মাধ্যমেরই কিন্তু ভিউ ফাইন্ডার নেই। ফর্ম ফ্যাক্টরের কাছে ভিউ ফাইন্ডারকেও হার মানতে হয়েছে। ছোট পকেট ক্যামেরায় আবার কিসের ভিউ ফাইন্ডার- এটাও ভাবতে পারেন কেউ কেউ! যারা দীর্ঘদিন ডি এস এল আর ব্যাবিহার করেছেন, তাঁদের কাছে এটি কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারপরেও বলা যায় এখনকার এল সি ডি গুলি (যেগুলি ভিউ ফাইন্ডার এর কাজ করে) তুলনামুলক ভাবে অনেক কম দ্রুতগতিসম্পন্ন হলেও ছবি তোলার রেস্পন্সিভনেস তাদের যে খুব খারাপ, তা আর বলা যাবেনা।

সাটার স্পিড

সাটার স্পিডের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মূল্য ছবি তোলার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সর্বনিম্ন সাটার স্পিড উপরোক্ত সব ক্যামেরার কম বেশী এক, তবে এই একটি ক্ষেত্রে নাইকনের ১ ইঞ্চির সেন্সর ক্যামেরা সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ সাটার স্পিড ১ সেকেন্ডের এক ভাগের ১৬০০০ ভাগ। এটি এক কথায় অবিশ্বাস্য। এমন সাটার স্পিড সম্পন্ন কোন ক্যামেরার কথা আজ পর্যন্ত শুনিনি। এই সাটার স্পিডে ঠিক কত পরিমান গতিকে স্টিল করে সম্ভব, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ হলেও আপনার ছোট শিশুর যে কোন গতিকে তা ধারণ করতে পারবে। এটি একটি ক্যামেরার অনন্য গুন হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব।

ওজন

উপরোক্ত তালিকায় দেখা যাচ্ছে যে স্মার্ট ফোনের ওজন যৌক্তিক ভাবেই কম। আর সবচাইতে বেশী ওজন সনির ব্রিজ ক্যামেরার। সাধারণত ডি এস এল আর ক্যামেরার ওজন বেশী হওয়াটাই যৌক্তিক, তবে ক্যাননের এই নতুন ডি এস এল আর এর হালকা পাতলা ওজনের জন্যই খ্যাতি পেয়েছে বেশী। পকেট কমপ্যাক্ট ক্যামেরা ক্যানন এস ১১০ এর ওজনও নেহায়েতই কম।

লেন্স

সাতটি ক্যামেরার তিনটি রিফ্লেক্স। কাজেই যে কোন লেন্স আপনি তাতে যোগ করতে পারেন। বাকি চারটি ক্যামেরার লেন্সগুলির মধ্যে সবচাইতে বেশী আলোচনা করার মতন হচ্ছে সনির ব্রিজ ক্যামেরার। ২৪-১২০০ মিমি একটি সাংঘাতিক রেঞ্জ। এই রেঞ্জ দিয়ে মনে হয় জগতের তাবৎ ফটোগ্রাফিক মুহূর্তকে ধারণ করা সম্ভব। আজকাল এইসব সুপার জুমের বেশ চাহিদাও লক্ষ্য করা যায়। তবে এই লেন্সের সমস্যা হল এর ২৪ মিমি এন্ডে এপারচার মূল্য ২.৮ এবং ১২০০ তে ৬.৩। সমস্যা অন্য কিছুতে নয় বরং স্বল্প আলোয়। আর বাকি অন্যান্য লেন্সগুলির জুম রেঞ্জ গতানুগতিক, রিফ্লেক্স ক্যামেরার কিট লেন্স সহ। মজা হচ্ছে স্মার্ট ফোনের লেন্স কিন্তু প্রাইম লেন্স। ৩০ মিমি এফ ২.৪। এই লেন্স স্বল্প আলোয় ভালো ছবি উপহার দেবে বলে মনে হয়।

ভিডিও

ভিডিওর ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি যে স্থিরচিত্র ধারণকারী ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ ব্যাক্তিগত ভাবে আমার ভাল লাগে না। কিন্তু শৌখিন ক্যামেরাম্যানদের চাহিদার চোটে এর গ্রহনযোগ্যতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এই জায়গায় সবগুলি ক্যামেরাই কিন্তু কমবেশি এগিয়ে আছে। বিশেষ করে ফুল এইচ ডি মুভি ধারণ করা এইসব ক্যামেরায় এখন ছেলেখেলার মতন। তবে স্টেরিও সাউন্ড এখন বেশ জনপ্রিয়। সব ক্যামেরায় এই সাউন্ড সুবিধে নেই। লেন্সের এপারচার মূল্য এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখে। আমি নিজে ক্যানন এস ১১০ দিয়ে ভিডিও করে দেখেছি। স্বল্প আলোয় দারুন ভিডিও হয়, যদি এক্সপোজার একটু বাড়িয়ে নেয়া যায়।

হট শু

ক্যামেরার ওপর একটা হট শু থাকার সবচাইতে বড় সুবিধে হল, এটার ওপর ভর করে আপনি একটি বহিরাগত ভিউ ফাইন্ডার এবং একটি ফ্ল্যাশ বসাতে পারেন। ফ্ল্যাশের সুবিধে তো বলে শেষ করা যাবেনা। আগ্রহী ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। যদিও কমপ্যাক্ট ক্যামেরার ফর্ম ফ্যাক্টরের কাছে এই সুবিধেটুকু কম্প্রোমাইজ করা ছাড়া আর উপায় থাকেনা। তাই যৌক্তিক কারণেই ছোট ক্যামেরায় এই সুবিধেটুকু অনুপস্থিত।

ওয়াই ফাই, জি পি এস

এই দুটি প্রযুক্তি ক্যামেরার কানেক্টিভিটির সাথে সম্পর্কিত। আর বলা যায় এখানেই ক্যামেরার ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে। তাই আধুনিক যে কোন ক্যামেরাই এই সুবিধেগুলি থেকে নিজেদের আর মুক্ত রাখতে পারছেনা। বিশেষ করে স্মার্ট ফোনের কানেক্টিভিটির কাছে ছোট কমপ্যাক্ট ক্যামেরাগুলি এই সুবিধের জন্য মার খেয়ে বসেছে। দুটি প্রযুক্তিই নতুন। আলোচ্য ক্যামেরাগুলির মধ্যে একমাত্র ক্যানন এস ১১০ ক্যামেরারই দেখছি ওয়াই ফাই রয়েছে। যদিও অন্যান্য ক্যামেরায় এই সুবিধে এখনও প্রাপ্য নয় তবে বলা যায় সেদিন আর দূরে নয় যখন এই দুটি প্রযুক্তি সকল ক্যামেরায় থাকবে।


আমরা যে মুল্যমানের ক্যামেরা নিয়ে এখানে আলোচনা করছি তাতে র সুবিধে থাকবেনা তা হয়না। কিন্তু দেখছি সনির ব্রিজ ক্যামেরায় এটি যুক্ত হয়নি। এটি বিস্ময়কর এবং মেনে নেয়া যায়না আসলে। স্মার্ট ফোন যেখানে নানান গবেষণায় লিপ্ত যে কিভাবে এটি ইন ক্যামেরায় ঢোকানো যায় সেখানে $ ৪০০ এর ক্যামেরায় তা থাকবেনা, এটা অদ্ভুত!

শেষ কথা

আজ আমাদের তুলনামুলক আলোচনার এখানেই ইতি। আসলে ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকার মধ্যে কোন্ ক্যামেরা ভাল হবে এটি ভীষণ সাব্জেক্টিভ একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর সবসময় ক্যামেরার স্পেসিফিকেশন থেকেও পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ স্পেসিফিকেশন আমাকে কিছু তথ্যের সন্ধান দেয় বটে তবে সেখান থেকে আমার ভালো লাগার তথ্য সবসময় নিহিত নেই। যে ব্যাক্তি কমপ্যাক্ট ক্যামেরা পছন্দ করেন, যে ব্যাক্তি চান এমন একটি ক্যামেরা যেটি সহজেই পকেটে ঢুকবে তাকে হাজার চেষ্টায় বলে কয়েও ডি এস এল আর কেনানো সম্ভব নয়। আবার যে ব্যাক্তি একটি ডি এস এল আর কেনার মনস্থ করেছেন তিনি স্মার্ট ফোনের ক্যামেরার দিকে পাত্তাই দেবেন না! আবার একই ব্যাক্তিমানুষের হাতে সব থাকতে পারে। এটিও বিচিত্র নয়!

Get Started With Lightroom 5 - 10 Things Beginners Want To Know How To Do

Sample Poses to Get You Started with Photographing Women











































Posing Guide: Poses to Get You Started with Photographing Weddings

I would like to state from the very beginning, that weddings in general are a major commercial industry to many professional photographers. Shooting wedding photography professionally is a much, much bigger topic than just 21 sample poses. The aim of this article is only to provide you with some initial guidance and ideas to take some nice bride and groom pictures.